তক্ষক সম্পর্কে বিস্তারিত । Tokkhok Somporke Bistarito

তক্ষক (Tokkhok) কি?

তক্ষক টিকটিকির মতো দেখতে এক ধরনের সরিসৃপ জাতীয় একটি প্রাণী। এটি গেকোনিডি গোত্রের গিরগিটি প্রজাতি। এর ইংরেজি নাম - Gecko. এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম - Gekko Gecko. প্রায় ৬০০ প্রজাতির তক্ষক বাংলাদেশ সহ মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কাম্পুচিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন ও ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। ব্যাপক নিধনের কারণে এটি দক্ষিণ এশিয়ায় বিপর্যস্ত একটি প্রাণী। তক্ষক সাধারণত ৩২ সে.মি বা ১৩ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে।

এর পিঠের দিক ধূসর, নীলচে-ধূসর বা নীলচে বেগুনি-ধূসর। তক্ষকের সারা শরীরে থাকে লাল ও সাদাটে ধূসর ফোঁটা থাকে। পুরুষ তক্ষকের গায়ের রঙ স্ত্রী তক্ষকের তুলনায় অধিক উজ্জল হয়ে থাকে। এর পিঠের সাদাটে ফোঁটাগুলি পাশাপাশি ৭-৮টি সরু সারিতে বিন্যস্ত। এদের ওজন ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। পরিবেশ অনুযায়ী তক্ষক গায়ের রঙ পরিবর্তন করতে পারে। এরা রাতে খুব পরিষ্কার দেখতে পায়। তক্ষক মানুষের চেয়ে ৩৫০ গুণ বেশি দৃষ্টি সম্পন্ন।

তক্ষক সম্পর্কে বিস্তারিত । Tokkhok Somporrke Bistarito

তক্ষকের (Tokkhok) জীবন প্রণালীঃ

তক্ষকের ডাকের জন্য এর অনেক সুনাম রয়েছে। এর ডাক চড়া, স্পষ্ট ও অনেক দূর থেকে শোনা যায়। এর ডাকের আওয়াজ কক্‌কক্‌ দিয়ে শুরু হয়, অতঃপর কয়েক বার স্পষ্টস্বরে ‘তক্‌-ক্কা’ ডাকে । এদের খাবার হলো কীটপতঙ্গ, ঘরের টিকটিকি ছোট পাখি ও ছোট সাপ। এরা ছাদের পাশের ভাঙা ফাঁক-ফোঁকড় বা গর্তে অথবা গাছে বাস করে। তক্ষক ১০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।


তক্ষকের (Tokkhok) দাম কত?

আমরা প্রায়ই টেলিভিশনে বা পত্রিকায় তক্ষক উদ্ধারের খবর শুনতে পাই। তক্ষক অনেক দামী প্রানী হওয়ার কারণে অনেকে লোভে পড়ে এবং এটা শিকার করে অবৈধ ভাবে বিক্রি করতে যায়। মূলত তক্ষকের দাম ওজন ও বয়সভেদে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তক্ষকের দাম নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও সিন্ডিকেট হতে যে তথ্য পাওয়া যা সেটা অনুযায়ী, প্রতিটি ৩০০ গ্রাম ওজনের তক্ষকের দাম প্রায় ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৭ কোটি টাকারও বেশি। তক্ষকের মূল্য এতো বেশি হওয়ার কারণ জনস্রুতি আছে যে এটা চীনা ওষুধ তেরীতে, AIDS এবং ক্যান্সার এর প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

তক্ষকের (Tokkhok) দাম কেন এতো বেশী?

ধারণা করা হয় যে তক্ষকের উৎপত্তি ড্রাগন থেকে হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তক্ষককে সৌভাগ্য ও উর্বরতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।

মূলত কয়েকটি কারণে তক্ষকের দাম খুব বেশি বলে ধারণা করা হয়ঃ
  1. AIDS বা HIV ভাইরাস প্রতিরোধঃ অনেকে মনে করে তক্ষক AIDS বা HIV ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকরী এবং এর জিহ্বা এবং রক্ত দিয়ে HIV ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ তৈরী করা হয়। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ও বিভিন্ন গবেষণা পত্রের মাধ্যমে জানা যায়, এইচআইভি বা এইডস রোগের চিকিৎসায় তক্ষক কোনই কাজেই আসে না।
  2. ভবিষ্যত গণনাঃ অনেক দেশেই অনেক লোক বিশ্বাস করে তক্ষক ভবিষ্যত বলে দিতে পারে।
  3. ক্যান্সার প্রতিরোধঃ ধারণা করা হয় যে, তক্ষকের শরীরে টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণাগুণ রয়েছে।
  4. চাইনিজ ওষুধ ‘জি ঝি’ (Ge Jie) তৈরীঃ চীনের একটি ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ‘জি ঝি’। চীনারা বিশ্বাস করে এই ওষুধ কিডনী ও ফুসফুসকে শক্তিশালী করে। এই ওষুধ তৈরীতে তক্ষককে একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান এ ধরনের ওষুধকে সমর্থন করে না।
  5. বণ্যপ্রাণী সংগ্রহঃ তক্ষক একটি সংকটাপন্ন বন্য-প্রানী। অনেকের বন্য প্রানী সংগ্রহের শখ থাকে ফলে অনেক অবৈধ সিন্ডিকেট বিভিন্ন দুঃষ্প্রাপ্য বণ্যপ্রাণী কেন-বেচা করে; তাদের কারণেও তক্ষকের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

তক্ষক (Tokkhok) কেনা-বেচা কি বৈধ?

তক্ষক কেনা-বেচা আন্তজার্তিকভাবে অবৈধ। বাংলাদেশে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী তক্ষক কেনা-বেচা বা তক্ষক অবৈধভাবে সংরক্ষণ দণ্ডনীয় অপরাধ। বাংলাদেশের মতো তক্ষক কেনা-বেচা চীন-ফিলিপাইন ও অনান্য দেশেও অবৈধ। ফিলিপাইনে তক্ষক সহ ধরা পড়লে ১২ বছর জেল এবং ১০ লক্ষ ফিলিপিনো পেসো জরিমানা করার আইন রয়েছে।

তক্ষককে (Tokkhok) কি পোষ মানানো সম্ভব?

অনেকেই তক্ষককে পোষ মানাতে চান। তাদের আকর্ষণীয় গায়ের রঙ এবং আকারে বড় হওয়ার কারণে পোষা প্রাণী হিসাবে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এরা সাধারণত আগ্রাসী মনোভাব ধারণকারী বন্যপ্রাণী। তক্ষক খুবই জোড়ে কামড় দিতে পারে এবং প্রচন্ড ব্যাথার সৃষ্টি করতে পারে। তবে অনেক অল্প বয়স থেকে চেষ্টা করলে পোষ মানানো যেতে পারে।

তক্ষক (Tokkhok) পেয়ে গেলে কী করা উচিত?

যেহেতু তক্ষক একটি সংকটাপন্ন বণ্যপ্রাণী তাই এটা কোনোভাবে ধরতে পারলে দ্রুত বাংলাদেশ বন-বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে হস্তান্তর করা উচিত। কোনো ভাবেই তক্ষক বিক্রি করা উচিত নয় এবং এটা কেনার জন্য টাকাও বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কারণ, আমাদের দেশের অনেক মানুষ লোভের বশবর্তী হয়ে তক্ষক ক্র‍য়ের জন্য টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছে। যেহেতু বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী তক্ষক কেনা-বেচা বা তক্ষক অবৈধভাবে সংরক্ষণ দণ্ডনীয় অপরাধ এবং এর কোনো নির্ভরযোগ্য বাজার নেই তাই সকলেরই এই লোভ পরিহার করা উচিত।
 

3 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন